প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুতের বাড়তি ব্যবহারের ফলে মোটা অঙ্কের বিল আসতে পারে। তাই মাসিক খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্যুতের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। একটু সতর্ক থাকলে বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ এড়ানো সম্ভব।
এই ১০টি কৌশল অনুসরণ করে আপনি বিদ্যুতের খরচ কমাতে পারবেন।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করুনঃ
বিদ্যুতের খরচ কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য ব্যবহার করা। যেমন- এলইডি বাল্ব। এই বাল্বগুলো সাধারণ ইনক্যান্ডিসেন্ট বাল্বের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ খরচ করে, আলোও অনেক বেশি। রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখা উচিত, সেগুলো যাতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন হয়।
মিটার নিয়মিত পরীক্ষা করুনঃ
কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন তা নিয়মিত মিটারে পরীক্ষা করুন। যদি দেখেন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, তাহলে মিটার ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা যাচাই করুন। অনেক সময় মিটারের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ভুল রিডিং আসে।
ব্যবহারের পর ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর প্লাগ খুলে রাখুনঃ
ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ডিভাইস যখন অব্যবহৃত থাকে, তখন সেগুলোর প্লাগ খুলে রাখা উচিত। অনেক ডিভাইস স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকা সত্ত্বেও কিংবা বন্ধ করলেও বিদ্যুৎ খরচ করতে থাকে। এজন্য কোনো বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার বা চার্জ করার পর অবশ্যই সকেট থেকে প্লাগ খুলে রাখুন।
এসির তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখুনঃ
এখন প্রচণ্ড গরম পড়ছে। তাই সবাই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এসি ব্যবহার করছেন। কিন্তু এসি বেশি ব্যবহার করলেই যে অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা তার উপরে রাখুন। একইসঙ্গে এসি নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং সার্ভিসিং করান। অনেক সময় দীর্ঘদিন সার্ভিসিং না করালে এসি বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে।
প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিনঃ
দিনের বেলা প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য জানালা এবং দরজা পুরোপুরি খুলে দিন। আপনার বাসা যদি দক্ষিণমুখী হয়, তাহলে এটি খুব ভালো কাজে দেবে। সূর্যের আলো ও তাপ সরাসরি ঘরে প্রবেশ বন্ধ করতে ভারি পর্দা বা গাছপালাও ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে আপনার কক্ষের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। কক্ষ শীতল রাখতে সারাক্ষণ এসি বা ফ্যান চালাতে হবে না।
বাসায় তাপ নিরোধক উপাদান ব্যবহার করুনঃ
সামগ্রিক তাপমাত্রা হ্রাস করার জন্য বাড়ির দেয়াল, ছাদ ও মেঝেতে মধ্যে তাপ প্রতিরোধী উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। ফলে তাপমাত্রা কমানোর জন্য বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যয় করতে হবে না। ফাইবারগ্লাস, সেলুলোজ, ফোমসহ অন্যান্য জিনিসকে তার নিরোধক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব তাপ নিরোধক উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করে বাসার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সাশ্রয়ী অভ্যাস গড়ে তুলুনঃ
আমরা অনেকেই রুম থেকে চলে যাওয়ার সময় লাইট ও ফ্যান বন্ধ করতে ভুলে যাই। এই অপচয়ের অভ্যাস পরিবর্তন করে সাশ্রয়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব।
সবুজায়নের দিকে নজর দিনঃ
প্রকৃতির শীতল সান্নিধ্য পেতে হলে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। সাম্প্রতিক দাবদাহের ফলে আমরা হয়তো এই বিষয়টি আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারছি। যত্রতত্র গাছপালা কেটে আমরা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেছি। তাই স্নিগ্ধ ও শীতল সবুজের আচ্ছাদনে থাকতে বাড়ির আশেপাশে যত বেশি সম্ভব গাছ লাগাত পারেন। গাছ থেকে যেমন বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাবেন, তেমনি পাবেন ছায়া, যা আপনার বাড়িকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করবে।
বৈদ্যুতিক সামগ্রী নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করুনঃ
আপনি যদি বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে চান, তাহলে রেফ্রিজারেটর, টিভি ও ওয়াশিং মেশিনের মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়মিত ও ভলোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা আবশ্যক। এগুলোর কোনো যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ বিল বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং পুরনো সামগ্রী থাকলে সেগুলোকে ভালোভাবে সার্ভিসিং করান আর সম্ভব হলে আধুনিক ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য কিনুন।
সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করুনঃ
সৌরবিদ্যুৎকে প্রাথমিকভাবে ব্যয়বহুল মনে হতে পারে। তবে যদি এটিকে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসাবে বিবেচনা করেন, তাহলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় করবে আর খরচও বাঁচবে অনেক। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের আরেকটি সুফল হচ্ছে আপনাকে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করতে হবে না। সৌরবিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। তাই যারা পরিবেশের ক্ষতি করতে চান না, তাদের জন্য এটি উত্তম বিকল্প। বাসার বারান্দা, ছাদ কিংবা অন্য যেকোনো ছোট্ট জায়গায় সোলার প্যানেল বসানো যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস